কনটেন্টটি শেয়ার করতে ক্লিক করুন
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক :
কক্সবাজার জেলার ডুলাহাজরা এলাকা রয়েছে গগনচুম্বী গর্জন, বৈলাম, তেলসুর, সিভিট, চম্পাফুল, চাপালিশ এবং বিবিধ লতাগুল্মরাজি-সমৃদ্ধ চিরসবুজ বনাঞ্চল। সেখানে দেখা যেত হাতি, বাঘ, হরিণ, ভল্লুক, বানরসহ অসংখ্য প্রজাতির পাখি। কিন্তু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে এবং অবৈধ শিকারের ফলে এ বনাঞ্চলের অসংখ্য বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতির ওপর বিরূপ প্রক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। যার কারণে অনেক বন্যপ্রাণী প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যেতে থাকে। বন্যপ্রাণী প্রাকৃতিক পরিবেশ, খাদ্যচক্র ও জীববৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মানুষের অস্তিত্বের জন্যও বন্যপ্রাণীর ভূমিকা অপরিসীম। উঁচু-নিচু টিলাসমৃদ্ধ চিরসবুজ বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল উন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষা, গবেষণা, ইকো-ট্যুরিজমে চিত্র বিনোদনের সুযোগ তৈরির জন্য ১৯৯৮-৯৯ আর্থিক সাল হতে সাফারি পার্কের যাত্রা শুরু হয়। ডুলাহাজরা বনাঞ্চলের ডুলাহাজরা ও হারগাজা ব্লকের ৯০০ হেক্টর বনাঞ্চল নিয়ে সাফারি পার্ক এলাকা গঠিত।সাফারি পার্কে বিদ্যমান বন্যপ্রাণীর মধ্যে রয়েছে বাঘ, সিংহ, মায়া হরিণ, হনুমান, বন্যশূকর, খরগোশ, বনগরু, বাঘডাসা, বনবিড়াল, মার্বেলবিড়াল, চিতাবিড়াল, বনরুই, সজারু, বাদুড়, লজ্জাবতী বানর, ভল্লুক, কালো ভল্লুক, সাম্বার শিয়াল, মেছো বাঘ, কাঠবিড়ালি, ওয়াইল্ডে বিস্ট, জলহস্তী, চিত্রা হরিণ। একজন পর্যটকের খুব কম সময়ে সাফারি পার্কের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে ধারণার জন্য প্রধান ফটকের ডান পাশে ডিসপ্লে ম্যাপ রয়েছে। বাঘ, সিংহ, হাতিসহ বিভিন্ন প্রাণী পর্যবেক্ষণ করার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে একাধিক পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। সাফারি পার্কের ভেতরে বিচরণরত বন্য পশুপাখির পানীয়জলের উৎস সৃষ্টির জন্য ৫০ হেক্টর এলাকায় আটটি জলাধার ও দুটি কৃত্রিম হ্রদ নির্মাণ করা হয়েছে। জলাধারসমূহে প্রতি বছর অসংখ্য অতিথি পাখি অবস্থান করে, যা পর্যটকদের আনন্দ দেয়। পার্কের উত্তর-পূর্বাংশে আনুমানিক ১৫০ হেক্টর এলাকা নিয়ে হাতির বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। যে কোনো পর্যটক হাতি দেখে ও চড়ে আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া বাঘ ও সিংহের বেষ্টনীতে পরিভ্রমণ করা যাবে। এ বেষ্টনীতে রয়েছে বাঘ ও সিংহের দল। তাছাড়া সাফারি পার্কে স্থাপিত হয়েছে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্র। এ কেন্দ্রে বাংলাদেশের প্রায় সব ধরনের বনাঞ্চলের গাছপালা ও বন্যপ্রাণীর মডেল, ম্যুরাল ও স্টাফিং তৈরি করে আলো ও শব্দপ্রবাহের মাধ্যমে বন্যপ্রাণী ও বনাঞ্চল সম্পর্কে দর্শকদের সম্যক ধারণা প্রদান করা হয়। এখানে আরও আছে ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম। এতে পর্যটক, শিক্ষার্থী ও গবেষকরা বিপদাপন্ন ও বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণী সম্পর্কে বাস্তব ধারণা লাভ করতে পারবে। সাফারি পার্কের প্রধান ফটকের ডান পাশে রয়েছে অর্কিড হাউস। এখানে প্রায় ৫০ প্রজাতির দেশি-বিদেশি প্রজাতির অর্কিড রয়েছে। চট্টগ্রাম শহর থেকে ১১০ কি.মি. দক্ষিণে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব পাশে চকরিয়া উপজেলা সদর হতে মাত্র ১০ কি.মি. দক্ষিণে সাফারি পার্ক স্থাপন করা হয়েছে। সরকার কর্তৃক ধার্যকৃত ফি প্রদানের মাধ্যমে সাফারি পার্ক পরিদর্শন করা যায়।
মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান :
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের চকরিয়া উপজেলার ফুলছড়ি রেঞ্জের আওতায় মেধাকচ্ছপিয়া বিটের অধীন বনাঞ্চলকে সরকারিভাবে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়েছে। ২০০৪ সালে সরকার এ ঘোষণা প্রচার করে। ২০০৯ সালের ১৬ মার্চ বাগানটিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা দেয় সরকার। পরে উদ্যানটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গঠন করা হয় বন বিভাগের সহব্যবস্থাপনা কমিটি। বন বিভাগের ৩৯৬ হেক্টর জমি নিয়ে ১৯৫৭ সালে মেধাকচ্ছপিয়া এলাকায় বাগানটি গড়ে তোলা হয়। এ জাতীয় উদ্যান প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা বৃক্ষরাজি নির্ভর। সর্বশেষ হিসাবে এ বাগানে প্রায় ৭ হাজার মাদার গর্জন গাছ রয়েছে। তবে লক্ষ্যণীয় হচ্ছে যে, মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানের মধ্যে এখন প্রায় ৩,৫০০ পরিবার বাস করে। জাতীয় উদ্যান ঘোষণার মাধ্যমে সরকার এ পরিবারসমূহকে পুনর্বাসন এবং জাতীয় উদ্যান ঘোষিত এলাকায় একটি পার্ক এবং পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। IPAC (Integrated Protected Area Co-management) নিসর্গ নেটওয়ার্ক প্রকল্পের আওতায় এ জাতীয় উদ্যান বাস্তবায়ন কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে সহব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস